বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড। দেশটি জাতিসংঘের সুখী দেশগুলোর রিপোর্টে টানা ষষ্ঠবারের মতো শীর্ষ স্থান দখল করেছে। তবে শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি নয়, এই সুখের পেছনে রয়েছে উন্নত জীবনযাপন, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং জীবনের ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ। যদিও গ্যালাপ ওয়ার্ল্ড পোল অনুসারে ফিনল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ নয়, তবে তার নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। নিম্নে পাঁচটি সুখী দেশ নিয়ে লেখা হলো-
১. ফিনল্যান্ড: সুখের মন্ত্র সঠিক ভারসাম্য
ফিনল্যান্ডের নাগরিকদের সুখের অন্যতম কারণ হলো কর্মজীবন এবং ব্যক্তিজীবনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা। ফিনল্যান্ডে কাজের চাপ কম এবং জীবনের প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। দেশের প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তাদের মানসিক শান্তি এনে দেয়। এই দেশের জনগণ নিয়মিতভাবে হাঁটতে যান, সাঁতার কাটেন এবং সাইকেল চালান, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে সুখের খোঁজ পেতে সাহায্য করে। ফিনল্যান্ডের নাগরিকেরা পৃথিবীকে শিক্ষা দেয়, কীভাবে একজন মানুষের জীবনকে সুখী ও স্বাস্থ্যকর করা যায়, তা তাদের সবার সঙ্গে ভাগ করে নেয়।
২. ডেনমার্ক: সামাজিক সাম্য ও সুস্থ জীবনযাপন
ডেনমার্কও সুখী দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে। সেখানে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সম্পদের বৈষম্য অত্যন্ত কম। ডেনমার্কের উন্নত জীবনযাপনের মান এবং মানুষের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ দেশের সুখী হওয়ার অন্যতম কারণ। এ দেশের নাগরিকরা যেমন ভালো স্বাস্থ্যসেবা পায়, তেমনি একটি পরিপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। কর্মজীবনে ভারসাম্য বজায় রেখে ডেনমার্কের মানুষ সুখী জীবনের খোঁজে চলেন।
৩. আইসল্যান্ড: শান্তি ও প্রকৃতির সান্নিধ্যে সুখ
আইসল্যান্ডের নাগরিকরা সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃতির সাথে তাদের সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। মনোমুগ্ধকর ভূপ্রকৃতির অধিকারী এই দেশটির মানুষদের করের চাপও খুব কম, এবং তাদের স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা ব্যবস্থা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। আইসল্যান্ডের তিন লাখ ৯০ হাজার বাসিন্দা বই পড়তে ভালোবাসেন, এবং দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাদের মানসিক শান্তি ও সুখের অন্যতম উৎস।
৪. সুইডেন: কর্মজীবনে বিশাল ছুটি, সামাজিক সুরক্ষা
সুইডেনের জনগণ কর্মজীবনে সবচেয়ে বেশি ছুটি উপভোগ করে, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে। এখানে একজন কর্মী সর্বোচ্চ ৪১ দিন বেতনসহ ছুটি নিতে পারেন, এবং সন্তান জন্মের পর বাবা-মা ৪৮০ দিন পর্যন্ত সবেতনে ছুটি নিতে পারেন। দেশটির স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বমানের। তবে সুইডেনে করের হার অনেক বেশি, যেখানে আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ কর দেওয়া হয়, কিন্তু এই রাজস্ব জনগণের স্বার্থে ব্যয় করা হয়।
৫. ইসরায়েল: যুদ্ধের মধ্যেও সুখী জীবন
ইসরায়েল, যেখানে গাজায় হামাসের সঙ্গে এক বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে এবং সম্প্রতি লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই দেশটি সুখী দেশের তালিকায় পাঁচ নম্বরে অবস্থান করছে। ইসরায়েলের অর্থনৈতিক শক্তি এবং উন্নত জীবনযাপন ব্যবস্থা তাদের সুখী হওয়ার অন্যতম কারণ। দেশটি তার অর্থনৈতিক অবস্থান, প্রযুক্তি এবং সামাজিক উন্নয়ন দ্বারা তার নাগরিকদের সুখী জীবন প্রদান করে।
ই-মেইলঃ anmsiddique326@gmail.com