প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ৪:৪২ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ২:২৫ পি.এম
ফয়সাল আলম সাগর,
বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের ফাইতং বাজার সংলগ্ন হেডম্যান পাড়ার সামনে সৌদিয়া ক্লথ স্টোর নামে কথিত কবিরাজ মোহাম্মদ হোসেন এর দোকানে স্বপ্নে পাওয়া পানিপড়া নিতে সপ্তাহের শনি মঙ্গলবার হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে এসব মানুষ একে অপরের কাছ থেকে শুনে পানিপড়া ও কবিরাজি ওষুধ নিতে ভিড় জমাচ্ছেন ফাইতং এর হেডম্যান পাড়ায়।
গত মঙ্গলবার নারী পুরুষের লম্বা লাইন ছিল চোখে পড়ার মত, এতে করে ফাইতং-গজালিয়া সড়কে তিব্র যানজটের সৃষ্টি হয়ে জন-সাধরনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয়। এ বিষয়ে কথা হয় ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ওমর ফারুকের সাথে, এসব কর্মকান্ডের বিষয়ে ওনার বক্তব্য সুস্পষ্ট নয়।
অনুসন্ধানে জানা যায় কথিত কবিরাজ মোহাম্মদ হোসেন পার্শবর্তী উপজেলা চকরিয়ার পহর চাঁদা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, দীর্ঘ ১৭ বছর সৌদি আরবে ছিল,সৌদি থেকে এসে সে প্রথমে মুদির দোকানের ব্যবসা শুরু করেন লামার ফাইতং বাজারে।ফাইতং ইউনিয়নে ব্রিকফিল্ড সিজনের ছয় মাস ওনার দোকানের ব্যবসা কোন রখম চলত বাকী ছয় মাস তেমন ব্যবসা ভালো চলতনা।এরই মধ্যে সে স্বপ্নের মাঝে বিশেষ মক্তবা পেয়েছেন আল্লাহর কাছে
মানুষের সমস্যা সামাধান করার জন্য এ কথা বলে প্রচার চালাতে থাকে সুকৌশলে, স্থানীয় কিছু লোভী প্রকৃতির মানুষকে হাত করে তাদের মাধ্যমে ভন্ডামীর প্রচারণা চালিয়ে যায় সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য। তার নিজ গ্রামের বিবির খিল জামে মসজিদের নামে প্রথমে ৮টি দানবক্স বানিয়ে প্রতি শনি ও মঙ্গলবারে পানিপড়া ও কবিরাজি চিকিৎসার জন্য আসা মানুষের কাছে কৌশলে হাতিয়ে নেন হাদিয়া।
বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা তার কাছে গিয়ে জানতে চাইলে সে কোন মানুষের কাছে সরাসরি কোন ধরনের হাদিয়া নেন কিনা,হাজার মানুষের ভিড়ের মাঝে ওনার সাথে সম্পৃক্ত থাকা ৩০-৩৫ জনের সিন্ডকেট প্রতারকরা সাথে সাথে চিৎকার করে বলেন ওনি কোন হাদিয়া নেন না,তবে যার যা ইচ্ছে মসজিদের দনবক্স এ নির্দ্বিধায় দান করে ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্ছ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খবর পাওয়া গেছে।
মোহাম্মদ হোসেনের বাড়ির পাশের চকরিয়ার পহরচাঁদার মোর্শেদ নামের এক ব্যাক্তি জানান সপ্তাহের প্রতি দুই দিনে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার মত দানবক্স থেকে তুলা হয়, এই দান বক্স গুলো তার কাছে চিকিৎসার জন্য আসা মানুষের ভিড়ের মাঝে ভ্রাম্যমাণ ভাবে তার নিজস্ব লোকের কাছে থাকে, মোর্শেদ আরো জানায় পহর চাঁদার বিবির খিল জামে মসজিদের দানবক্স গুলো থেকে আনুমানিক সংগৃহিত ৩০ লাখ টাকা থেকে শুধুমাত্র ৫০ হাজার ৭শ টাকা বিবির খিল জামে মসজিদের কমিটিকে দেওয়া হয়েছে, বাকী টাকার কথা মসজিদ কমিটি জানতে চাইলে এই টাকা পরে দেওয়া হবে বলে কৌশলে এড়িয়ে যায় কথিত কবিরাজ মোহাম্মদ হোসেন, পাশাপাশি ফাইতং জামে মসজিদের নামে ও অন্যন্য মসজিদের দানবক্স এর নামে ও টাকা তুলা হয়।
ফাইতং ৮নং ওয়ার্ডের নাসির উদ্দিন বলেন কথিত কবিরাজ মোহাম্মদ হোসেন এর পানিপড়া পান করে ফাইতং বাজারের বাসিন্দা বেলাল নামের বাক-প্রতিবন্ধী যুবক কথা বলতে পারে বলে গুজব ছড়িয়ে ধর্মান্ধ মানুষের বিশ্বাস নিয়ে চিনিমিনি খেলছেন প্রতিনিয়ত।
সরেজমিনে গিয়ে বাক-প্রতিবন্ধী বেলালের সাথে কথা বলে বুঝা যায় সে আগের মতই আছে সে কথা বলতে পারেনা,এবং সে নিজের মুখে ইশারা ইঙ্গিতে জানায় মোহাম্মদ হোসেন একজন ভন্ড, বাক-প্রতিবন্ধী বেলাল কে টাকা দিয়ে কৌশলে তার পাশে রেখে প্রচারণার স্বার্থে লোক দেখানো নাটক করত দিনের পর দিন।
কথিত কবিরাজ মোহাম্মদ হোসেন এর সাথে দেখা করে জানতে চাইলে এসব বিষয়ে, সে জানান আল্লাহ তাআলা ওনার স্বপ্নের মধ্যে এসে তাকে বলেন তুমি পানিপড়া ও বিশেষ গাছের রসের মাধ্যমে মানুষের চিকিৎসা কর। সে আরো জানায় তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, তার মেয়ে ডাক্টার তার কোন অভাব নেই, দানবক্স এর উত্তেলিত টাকার প্রতি তার কোন লোভ নেই।
তার নিজ এলাকা চকরিয়ার পহর চাঁদার ইসমাইল হোসেন জানান, মোহাম্মদ হোসেনের প্রথম স্ত্রীর বড় ছেলে সুহেল ইয়াবা মামলার আসামি সে বর্তমানে মালেশিয়া থাকে,২য় ছেলে ছোটন সে ইয়াবা মামলার পলাতক আসামি।তার কোন ছেলে মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্টার না, ছেলে মেয়েদের ডাক্টার বা ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দেওয়া তার প্রতারণার আরেকটি অভিনব কৌশল।
পানিপড়ার জন্য আসা পার্শবর্তী উপজেলার লক্ষ্যারচরের বাসিন্দা মোঃ আকবর ও আসাফ উদ্দিন জানান, মানুষের কাছে শুনে পানিপড়া পান করেন ফাইতং এ গিয়ে তবে কোন উপকার পাননি তারা,অসংখ্য মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা কোন ধরনের উপকার পাননি। অনেকেই এসব নিছক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু না বলে জানান।
লামা উপজেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান চৌধুরীর সাথে এসব বিষয়ে কথা বললে ওনি জানান, যতাযত উপযুক্ত প্রমান থাকলে মসজিদের দানবক্স এর টাকা আত্মসাৎ এর, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানিয়েছেন, এবং বিষয় টি ওনি তদন্ত করে দেখবেন বলে ও জানিয়েছেন।
এসব বিষয়ে লামার সুশীল সামাজের পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি লামার কোর্ট অফিসার এডভোকেট আরিফ চৌধুরী জানান আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই ধর্মান্ধতার কারনে আবেগের যায়গায় নিজেকে দাড়করায়, ধর্মীয় গোড়ামিকে অন্ধ বিশ্বাস করে অনেকের শুনা কথা কর্ণপাত করে এখনো মানুষ কুসংস্কারের পথে দৌড়ায়,ওনি জানান এসব বন্ধের জন্য প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে জানিয়েছে।