ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়,
পাখিরা কি জানতে পারে মৃত্যুর দিনক্ষণ ? নিজের এলাকায় স্বাভাবিক ভাবে কোন
পাখিকে মরতে দেখেছেন কখনো ? নিশ্চয় নয়।জানেন তো পাখিরা বংশ বিস্তারের জন্য কোথায়
যায় । কিন্তু পাখিরা মৃত্যুর উদ্দেশ্যে কোথায় যায় ? তারা কি জানতে পারে তাদের মৃত্যুর দিনক্ষণ? পাখিদের
মধ্যেও কি শক্তিশালী জ্যোতিষী রয়েছে? ডিমসাদের ভূমি হাফলঙ্গের থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে
জটিঙ্গা।
আমার বাবা সেখানে গিয়ে দেখে এসেছেন সুদূর জার্মানী, রাশিয়ার সাইবেরিয়া ,চীন,কোরিয়া ,অস্ট্রেলিয়া,
আমেরিকা, কানাডা সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পাখিরা জটিঙ্গাকে বেছে নিয়েছে না ফেরার দেশে যাওয়ার
কেন্দ্র। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে নবেম্বর পর্যন্ত হাজার হাজার রঙ বেরঙের পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে
আসে সুউচ্চ পাহাড়ের কোণে জটিঙ্গায়। তাদের কিচির মিচির গানে মুখরিত হয়ে ওঠে এই সুদৃশ্য জনপদ।
ফুলে ফুলে ভাড়া জটিঙ্গার গাছে গাছে তাদের ছোটাছুটি দেখার মতো। তারপর এক সময় তারা ঝাপিয়ে পড়ে
ভারত –বাংলাদেশের দুই পাহাড়ের মাঝখানে এক কিলোমিটার নিচে বয়ে যাওয়া খর শ্রোতা নদীতে। তারপর
বিলীন হয়ে যায় নদী গর্ভে।
জটিঙ্গা পাহাড়ের একেবারে শীর্ষে অবস্থিত। দীর্ঘ তিন মাস ধরে চলে তাদের মৃত্যু বরণ। সারা বিশ্বের ৪০০
বিজ্ঞানী এদের নিয়ে কয়েক যুগ থেকে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখানো কোন সমাধান সুত্র খুঁজে পান
নি। জটিঙ্গা পাহাড়ের বুকে অসংখ্য স্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে বিজ্ঞানীরা দিনরাত গবেষণা করে চলেছেন এখনো।দূর
দূর থেকে আসা পর্যটকদের জন্য অসম সরকার একটি সুদৃশ্য পর্যবেক্ষন বাংলো তথা গেস্ট হাউস নির্মাণ
করেছে পাহাড়ের অনেকটা উঁচু অবস্থানে। গেস্ট হাউসের নিচে একটি ফলক শোভা পাচ্ছে। তাতে লেখা
রয়েছে, “ বিশ্বের পরিযায়ী পাখিরা এখানে ছুটে আসে ,এবং আত্মহত্যা করে” ।
এখানে এলে যেমন দুচোখের শান্তি পাওয়া যাবে,তেমনি তাদের মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়াও নেমে আসবে।
তবে অনেক স্থানীয উপজাতিরা এই পাখিদের আগমনের সুযোগ নিয়ে পাখিদের শিকারও করে থাকেন। এটা
নির্মম ও জঘন্য। সরকার ও স্থানীয ডিমসা শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের এগিয়ে এসেছেন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
জানিয়ে।
গুয়াহাটি থেকে সড়কপথে ১২ ঘণ্টা। ট্রেনে মাত্র ৫ ঘন্টার পথ হাফলং। সড়ক পথে যেতে যেতে চোখে পড়বে
দীর্ঘ ঘন অরণ্য। লঙ্কায় পৌছনের পর শুরু হবে পাহাড়ের পথ। হাফলং এর কাছাকাছি এলেই চোখে পড়বে
ফুলে ফলে ভরা ভারতের দ্বিতীয় সুইজারল্যন্ড। লাল ,সাদা ,হলুদের পাহাড়। অনেক উঁচুতে শীতের সময়
বরফ পড়তে দেখা যায়। ঘন মেঘের কুয়াশার আস্তরণ ভেদ করে জটিঙ্গায় যেতে হয়। হাফলং এর স্থায়ী
বাসিন্দাদের ৩৫ শতাংশ বাঙালি। বাকিরা ডিমসা সম্প্রদায়ের। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই অঞ্চলটি ভারত থেকে
বিচ্ছিন্ন ছিল। নিষিদ্ধ সংগঠন ডিমা হালম ড়াউগা {ডি এচডি নুনিসা} , ব্ল্যাক উইডো {ডি এচ ডি
গড়লোসা],পৃথক রাজ্যের দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দিয়ে মারাত্মক অস্ত্র একে ৪৭, মর্টার, মেশিনগান,
রকেট লঞ্চার নিয়ে দীর্ঘ লড়াই করেছিল। সুরক্ষা কর্মী ,নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীর গোলাগুলিতে ৫ হাজারের বেশি
মনুস প্রাণ হরিয়েছিলেন। অনেক ঝুঁকি নিয়ে আমার বাবা সাংবাদিক মানস বন্দ্যোপাধ্যায় অজ্ঞাত স্থানে মাটির
নিচে দেখা করেন ডি এচ ডির সর্বাধিনায়ক দিলীপ নুনিসার সঙ্গে। সে এক বিশাল কাহিনী। তারপর মানস
বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের মূল স্রোতে ফিরে আস্তে রাজি করান। দিলীপ নুনিসা যুদ্ধ বিরতিতে রাজি হন। এরপর
দিল্লিতে নর্থ ব্লকে গোপন আড্ডার বাইরের বেশ কয়েকজনকে নিয়ে প্রথমে স্বরাষ্ট্র সচিব {নর্থ ইস্ট} আর এ
সি জৈনের সঙ্গে দেখা করেন। দ্বিতীয় দফায় দেখা করেন উপ প্রধানমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লাল কৃষ্ণ
আদবানির সঙ্গে। এই ব্যপারে সহযোগিতা করেছিলেন সেই সময়ের বিজেপি সভাপতি এম বেংকাইয়াহ নাইডু ও
সুষমা স্বরাজ।
তারপর এসেছিল ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারী। দিলীপ নুনিসা ৬ মাসের জন্য যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর
করেন।
এরপর একে একে ব্ল্যাক উইডো তথা ডি এচ ডি গড়লসা ,বেঙ্গলি টাইগার ফোর্স ,এন এফ টি ত্রিপুরার
নয়নবাসি ওরফে এস নকবার বরক মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে মূল স্রোতে ফিরে আসেন। শান্তি ফিরে
আসে পুরো অঞ্চলে।
ই-মেইলঃ anmsiddique326@gmail.com