গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় এক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ায় শিক্ষকের পদত্যাগ ও বিচার দাবীতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
প্রকাশের সময় : মে ৬, ২০২৫, ৫:৪৪ অপরাহ্ন /
১০০


গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় এক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ায় শিক্ষকের পদত্যাগ ও বিচার দাবীতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের সময় বিদ্যালয়ে আসার পথে প্রধান শিক্ষককে গণধোলাই দিয়েছে এলাকাবাসী। আজ মঙ্গলবার উপজেলার মান্দ্রা-রাধাগঞ্জ ইউনাইটেড ইনষ্টিটিউশনে এ ঘটনা ঘটে। সকাল ১০ টায় প্রতিদিনের মত শিক্ষার্থীরা সমাবেশ অংশ নেয়। সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না গিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের পদত্যাগ ও বিচারের দাবীতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে রাধাগঞ্জ-কুশলা সড়কে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন বিদ্যালয়ের আসার সময় এলাকাবাসী তাকে গণধোলাই দেয়। পুলিশ এসময় তাকে উদ্ধার করে। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মাসুম বিল্লাহ ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীরা তাদের সামনে প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন ও তার ভাই সহকারি শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের পদত্যাগ এবং বিচারের দাবীতে বিভিন্ন প্রকার স্লোগান দিতে থাকে। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মাসুম বিল্লাহ দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত পূর্বক শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যায়। জানাগেছে, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিনের ভাই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজল বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় এসব ঘটনা জানাজানি হলেও প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দীন প্রভাবে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। গতকাল সোমবার রাতে দশম শ্রেনির এক ছাত্রীকে মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাব দিলে ওই ছাত্রী কৌশলে শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের কথাগুলো রেকর্ড করে অভিভাবকদের জানায়। পরবর্তীতে এই অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ওই ছাত্রীর মা বলেন, একজন শিক্ষক হয়ে মেয়ের বসয়ী ছাত্রীকে কিভাবে কুপ্রস্তাব দেয়? শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজল দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়েসহ বিভিন্ন মেয়েকে কুস্তাব দিচ্ছে বলে আমার মেয়ে আমাকে জানায়। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিনকে জানালেও তিনি তার ভাইয়ের বিচার করেননি। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুরভী বলেন, শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজল ক্লাসে ও প্রাইভেট পড়ার সময় প্রায়ই ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ এবং কুপ্রস্তাব দিতো। আমরা প্রতিবাদ করতে চাইলে পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দিতো। ভয়ে আমরা চুপ থাকতাম। বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী সাগর শেখ বলেন আমরা বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থাকতেই শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের উত্যক্ত করার কথা শুনেছি। তবে তখন আমরা কোন প্রমান পাইনি। এবার একটি অডিও রেকর্ডের মাধ্যমে এই লম্পট শিক্ষকের মুখোশ উন্মোচন হলো। আমরা তার পদত্যাগসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এ বিষয়ে জানার জন্য বিদ্যালয়ে ও বাড়িতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন ও তার ভাই সহকারি শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলকে পাওয়া যায়নি। দুজনের মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে।কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যালয়টির পরিবেশ বর্তমানে শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার এস এম শাহজাহান সিরাজকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে দুই কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
মোঃ হুসাইন আকরাম
আপনার মতামত লিখুন :