চীনে শুল্ক সুবিধা পেয়েও বাড়ানো যায়নি রপ্তানি


প্রকাশের সময় : জুলাই ৪, ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন / ১৭৭
চীনে শুল্ক সুবিধা পেয়েও বাড়ানো যায়নি রপ্তানি

চীন বাংলাদেশের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হলেও দুই দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এই বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে চীনা বিনিয়োগকারীদের দেশে উন্নত প্রযুক্তি ও তৈরি পোশাক খাতের সংযোগ শিল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশা, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফরে এই বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ। চীনে শুল্ক সুবিধা পেয়েও বাড়েনি রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, চীন বিশ্বের বড় রপ্তানিকারক ও দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ। একই সঙ্গে দ্বিতীয় আমদানিকারক দেশ। এই বাজারে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও উন্নত প্রযুক্তি ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতার অভাবে কাজে লাগাতে পারছে না। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। এ ছাড়া দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে এ বিষয়ে যৌথ ঘোষণা আসতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার সমান চীনা মুদ্রা আরএনবি ঋণ সহায়তা চাইবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, এমওইউ বিষয়ে গত ২৬ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানে হয়েছে। গতকাল বুধবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। এ ছাড়া চীনও এ বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেছে বলে তিনি জানান।

২০২২ সালে চীনের বাজারে ৯৯ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও বাংলাদেশ সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না। বরং দেশটিতে রপ্তানি আরো কমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৬৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য। অন্যদিকে এর আগের অর্থবছরে তা ছিল ৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। একই সঙ্গে কমেছে দেশটির বিনিয়োগ। বাংলাদেশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুসারে সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ এসেছে ৯ কোটি ৩২ লাখ ডলার। পাঁচ বছর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ১১৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশটির মোট বিনিয়োগ ১২৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২৪ বিলিয়ন বা দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ৬৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। চীন দুই হাজার ২৯০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরো বলেন, বাংলাদেশ প্রধানত তৈরি পোশাক, পাট, পাটজাত পণ্য, মাছ ও চামড়া রপ্তানি করে থাকে। এটি চীনের মোট আমদানির ০.০৪ শতাংশ মাত্র। এ ছাড়া বাংলাদেশ আমদানি করে তেল, ক্রুড, ইলেকট্রনিক সার্কিট, যন্ত্রপাতি, পাম অয়েল, পেট্রোলিয়াম গ্যাস। বৈশ্বিক বাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিওর তথ্য মতে, ২০২২ সালে দেশটি ২.৭২ টিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। দেশটিতে যদি মাত্র ১ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করতে পারে, তাহালে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২৭ বিলিয়ন বা দুই হাজার ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল। এই ব্যবধান কমিয়ে আনতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা চাইবেন বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ বাড়ানো। একই সঙ্গে বিনিয়োগ করা শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে পুনরায় রপ্তানি করা গেলে এই বাণিজ্য ঘাটতি একসময় কমে আসবে। তিনি বলেন, দেশে চীনের ৩০০ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। এটা ১০ গুণ বৃদ্ধি করতে পারে। দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত পোশাক। এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, চীনের উৎপাদন ও সরবরাহ লাইন বহুমুখী করার বেশ আগ্রহ রয়েছে। কম মজুরি ও উন্নত সংযোগ শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশ চীনের উৎপাদন খাতের আঞ্চলিক হাব হতে পারে। এ ছাড়া বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে চীন, কানাডা, ইউরোপ, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পুনরায় রপ্তানির মাধ্যমে চীন শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে পারে। তাঁরা জানান, চীনের আমদানীকৃত পোশাকের বাজার ১০ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া দেশটির অভ্যন্তরীণ পোশাকের বাজার ৩৩০ বিলিয়ন ডলার। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানি খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান কচি কালের কণ্ঠকে বলেন, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে চীনের বিশাল বিনিয়োগের সুযোগ আছে। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে ওভেন ও নন-কটন টেক্সটাইল ও উচ্চ মূল্য সংযোজনকারী পোশাকশিল্পে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে দেশটির বিনিয়োগকারীদের আমরা আহ্বান জানাব। বাংলাদেশে হাই-অ্যান্ড টেক্সটাইল এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে চীনা বিনিয়োগে উভয় পক্ষই লাভবান হবে। প্রাকৃতিক তন্তু বা ম্যানমেইড ফাইবারভিত্তিক পোশাক উৎপাদনে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত অবকাঠামো উন্নয়নের দুই দেশের ব্যাবসায়িক অংশীদারি বাড়ানোর অনেক সুয়োগ রয়েছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিসহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে চার দিনের সফরে চীন যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ বছর পর আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর করবেন।