ইলম বা জ্ঞান মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও নিয়ামত। ইসলামে জ্ঞানের গুরুত্ব অনেক বেশি। মুসলমানদের প্রতি প্রেরিত আসমানি গ্রন্থ কোরআনের প্রথম বার্তাই ‘ইকরা বা পড়ো’। অর্থাৎ জ্ঞান অর্জন করো।
ইসলাম থেকে ইলম আলাদা করা অসম্ভব। ইসলামের প্রতিটি অংশের মধ্যেই ইলম জড়িয়ে আছে। ইলম ছাড়া যথাযথভাবে ইসলাম পালন সম্ভব নয়। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন—যেকোনো ক্ষেত্রেই ইলমের প্রয়োজন আছে।
এ জন্যই সর্বপ্রথম কোরআনে ইলমের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘‘পড়ো! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ থেকে। পড়ো! তোমার প্রতিপালক মহান, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না।’’
(সুরা : আলাক, আয়াত : ১-৫)
ইলম প্রসঙ্গে অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তিনি (আল্লাহ) মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে জ্ঞানের বিশ্লেষণ ও বর্ণনা শিখিয়েছেন।’ (সুরা : আর রহমান, আয়াত : ৩-৪)
মানবজাতি আশরাফুল মাখলুকাত নির্বাচিত হয়েছে মূলত জ্ঞানের কারণেই। অন্য সব প্রাণীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব-কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব যাই বলি না কেন, তা সম্ভব হয়েছে ইলমের মাধ্যমেই। ইলম অন্বেষণকারীকে হাদিসের ভাষায় বলা হয় ‘তালেবে ইলম’।
পরিভাষায়, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাসুল (সা.)-এর দেখানো তরিকায় জ্ঞান অর্জন করে এবং সে অনুযায়ী আমল করে তাকে তালেবে ইলম বলা হয়।’
তালেবে ইলমের মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াত এসেছে। ইলম বা জ্ঞান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। কেউ চাইলেই ইলমের উত্তরাধিকার হতে পারে না। পারে না ইলম অন্বেষণকারী বা তালেবে ইলম হতে। এ জন্য খোদায়ি বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। আর আল্লাহ তাকেই ইলমের জন্য মনোনীত করেন, যার জীবন দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দিয়ে ভরপুর করে দিতে চান। বুখারির বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান তাকে দ্বিনের সঠিক ইলম দান করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৭১)
তালেবে ইলমের মর্যাদা সম্পর্কে অন্য হাদিস এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তালেবে ইলমের জন্য সব কিছুই ইস্তিগফার করে। এমনকি আকাশের তারা, সমুদ্রের মাছও তার জন্য ক্ষমা চায়।’ (মুসনাদে আবি ইয়ালা : ২/২৬০)
ইলম অন্বেষণকারীর পায়ের নিচে নুরের পাখা বিছিয়ে দেওয়া হয়। সাফওয়ান (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এলাম। তখন তিনি মসজিদে বসা ছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি এসেছি ইলম অর্জনের জন্য। তিনি বলেন, ‘তালেবে ইলমকে মারহাবা। নিশ্চয়ই তালেবে ইলমকে ফেরেশতারা ঘিরে রাখে এবং তাদের ডানা দিয়ে ছায়া দিতে থাকে। এরপর তারা সারিবদ্ধভাবে প্রথম আসমান পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যায়। এসব কিছু তারা তালেবে ইলমের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য করে।’ (তাবারানি কাবির,
হাদিস : ৭৩৪৭; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, হাদিস : ৫৫০)
ফেরেশতারা শুধু তালেবে ইলমের সম্মানে নিজের ডানা প্রসারিত করে তাদের ছায়া দেওয়ায়ই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং হাদিসে আরো চমৎস্যর বর্ণনা এসেছে। হাদিসে বলা হয়েছে, তালেবে ইলমের মর্যাদা এত বেশি যে তারা যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়, ফেরেশতারা তাদের পাখা বিছিয়ে দেয়। মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘অবশ্যই ফেরেশতারা তালেবে ইলমকে ভালোবাসে। তারা যখন রাস্তায় চলে ফেরেশতারা নিজের পাখা বিছিয়ে দেয়। তালেবে ইলমের জন্য সৃষ্টিকুলের সব কিছু দোয়া করতে থাকে। এমনকি আকাশের তারা, সমুদ্রের মাছ তাদের জন্য দোয়া করে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২১৭১৫; জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮২
আপনার মতামত লিখুন :