দুই কোটি টাকার হেরোইন, মামলা হয়নি ৭ মাসেও


প্রকাশের সময় : জুলাই ১২, ২০২৪, ৩:৪৩ পূর্বাহ্ন / ৭২
দুই কোটি টাকার হেরোইন, মামলা হয়নি ৭ মাসেও

সাত মাস আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে যৌথ অভিযানে একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে দুই কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধারের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। অভিযানে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের কাছে মামলা না করার কারণ জানতে চেয়েছেন আদালত।

এই আদেশের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শক সম্প্রতি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এত বড় চালান উদ্ধারের পর মামলা না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। আমলযোগ্য অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত মামলা না করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। জব্দ করা হয়নি বাসটি। অভিযানে থাকা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) চট্টগ্রাম-৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সীতাকুণ্ড থানার সাবেক পরিদর্শকের (তদন্ত) কাছে এর ব্যাখ্যা চান আদালত। তাঁরা লিখিতভাবে আদালতের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। তবে ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায় ঢাকা থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালিয়ে ২ কেজি ৫৫ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয় একটি হাতব্যাগ থেকে। যার আনুমানিক মূল্য দুই কোটি টাকা। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা পরিদর্শক এস এম আলম খান সীতাকুণ্ড থানায় একটি জিডি করেন। জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ পিয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের অনুমতি নিয়ে জব্দ করা মাদক থেকে যে আলামত রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে, তার প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। আলামত নতুন করে চাওয়ায় গত ১৩ মে ঢাকার গেন্ডারিয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে আবার পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সহিদুল ইসলাম গত ২০ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে উল্লেখ করেন, মাদকের এত বড় চালান উদ্ধারের ঘটনায় আমলযোগ্য অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও কেন মামলা করা হয়নি। মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত বাসটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী জব্দযোগ্য হলেও কেন জব্দ করা হয়নি। বাসের চালক ও সহকারীর পরিচয় জানা সত্ত্বেও কেন গ্রেপ্তার কিংবা আসামি করা হয়নি? মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার পরিদর্শক এস এম আলম খান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযানে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে জিডি করেছি। একই জায়গায় গত বছরের জুনে হেরোইন উদ্ধারের ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেছিলাম। তখন আসামি গ্রেপ্তার ছিল। আসামি না থাকলেও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় মামলা না করাটা ভুল ছিল।’

এদিকে ঘটনাস্থল থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বিজিবি চট্টগ্রাম ব্যাটালিয়নের অধিনায়কও উদ্ধার করা মাদক থেকে আলামত সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠান। আদালত তাঁদের কাছে জানতে চান, কোন আইনের কোন ক্ষমতাবলে জব্দ করা হেরোইন থেকে আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষায় কী পাওয়া গেছে, তা-ও জানানো হয়নি আদালতকে। আদালতে দেওয়া লিখিত জবাবে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলাউদ্দিন উল্লেখ করেন, উদ্ধার করা আলামত কোনোভাবে কেউ যাতে পরিবর্তন করতে না পারে, সে জন্য সরল বিশ্বাসে আলামত সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার প্রতিবেদন অনিচ্ছাকৃত ভুলবশত আদালতে প্রেরণ করতে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষমা চান তিনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার, ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদকসদৃশ বস্তু পাওয়া গেছে। একইভাবে এই ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য আদালতে অনুরোধ করেন বিজিবি চট্টগ্রাম ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী। তবে বিজিবি আলামত সংগ্রহ করে র‍্যাব সদর দপ্তরের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে যে আলামত পাঠিয়েছে, সেখানে মাদক পাওয়া পায়নি। আদালত এই দুজনের জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁদের অব্যাহতি দেন।

জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদনটির জন্য অপেক্ষা করছি। এটি পেলে মামলা কিংবা পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’ আমলযোগ্য অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও মামলা না করে জিডি করা হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ভুল হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাসে হেরোইনগুলো কেউ না কেউ তুলেছে। তাদের বাঁচাতে মামলা না করে আমলযোগ্য অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও জিডি করা হয়েছে। আদালত দায়িত্বে অবহেলাকারী পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেও এখনো কিছু হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে মাদকের বিস্তার রোধ করা যাবে না।