দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কুষ্টিয়ায় ছাত্রদলের দুই নেতাকে বহিষ্কার


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪, ১২:০৬ পূর্বাহ্ন / ৬৭
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কুষ্টিয়ায় ছাত্রদলের দুই নেতাকে বহিষ্কার

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদুজ্জামান ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুম পারভেজকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ শনিবার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি পদমর্যাদা) জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মুজাক্কির রহমান রাব্বী প্রথম আলোকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও দুই নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদুজ্জামান ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুম পারভেজকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তাঁদের সঙ্গে কোনোরূপ সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।

গত বুধবার দুপুরে দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে চাঁদা তোলা নিয়ে দ্বন্দ্বে বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে দৌলতপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত আটজন আহত হন। এ ঘটনার জেরে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে চাঁদা তোলা নিয়ে দ্বন্দ্বে বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে দৌলতপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত চারজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হতো। তখন চাঁদার অর্থ স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও দলিল লেখকেরা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিতেন। সরকার পতনের পর রেজিস্ট্রার কার্যালয় দখল নেন বিএনপিপন্থীরা। তাঁরা প্রথমেই বেছে বেছে আওয়ামীপন্থী দলিল লেখকদের মারধর করে তাঁদের বের করে দেন। এরপর আগের প্রক্রিয়ায় দলিলপ্রতি চাঁদা তোলা শুরু করেন।

উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর ইকবালের অভিযোগ, উপজেলা ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কতিপয় নেতা-কর্মী এই চাঁদাবাদির সঙ্গে জড়িত। তাঁর বাবা দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আকবর আলীর নাম ভাঙিয়ে এই চাঁদাবাজি করা হচ্ছিল। তিনি ও তাঁর বাবা চাঁদাবাজির প্রতিবাদ জানান। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পর্যন্ত গড়ায়। এরপর দলের শীর্ষ নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দেন।

সেই অনুযায়ী বুধবার সকালে দৌলতপুর উপজেলা বাজারে স্থানীয় বিএনপির কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন উভয় পক্ষ। পরে কথা-কাটিকাটির এক পর্যায়ে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদুজ্জামান রুবেলের নেতৃত্বে মিলন, হিমেলসহ ২০ থেকে ২৫ জন জাফর ইকবাল ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা চালান। হামলাকারীরা লাঠিসোঁটা দিয়ে তাঁদের বেধড়ক পেটান। এ সময় আকবর আলীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন হামলাকারীরা। এতে দৌলতপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর ইকবাল (৩২) ও তাঁর অনুসারী মাসুদ পারভেজ (২৪), কৌশিক (২০), রতনসহ (২২) কমপক্ষে আটজন আহত হন।

গুরুতর আহত জাফর ইকবাল, মাসুদ পারভেজ, কৌশিক ও রতনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহত জাফর ইকবাল জানান, বিগত ১৭ বছর তিনি ও তাঁর বাবা আওয়ামী লীগের হামলা-মামলায় নির্যাতনের শিকার। আওয়ামী লীগের লোকদের ভয়ে উপজেলার কোথাও বিএনপি কার্যালয় চালাতে সক্ষম না হলেও তাঁর বাবা আকবর আলী উপজেলা বাজারে বিএনপির কার্যালয় টিকিয়ে রেখেছিলেন। সেই কার্যালয়েই নিজ দলের লোকদের হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি দলীয় হাইকমান্ডের কাছে এর বিচার দাবি করেন।

হামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদুজ্জামান রুবেলের ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘লোকমুখে জানতে পেরেছি, যুবদল ও ছাত্রদলের মধ্যে ছোট সংঘর্ষ হয়েছে। তবে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’