গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গেল চারদিনের ব্যবধানে জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৭৬ সেন্টিমিটার কমে ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে ঘাঘট নদীর পানি ৪০ সেন্টিমিটার কমে জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরআগে, গেল ৫ জুন পর্যন্ত জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সর্বোচ্চ ৮৯ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি সর্বোচ্চ ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা বন্যা কবলিত হয়। এছাড়া সুন্দরগঞ্জের তিস্তায় পানি বৃদ্ধি হওয়াসহ জেলার চার উপজেলার ২৯ ইউনিয়নের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তলিয়ে যায় সাড়ে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমির পাট, আউশ ধান, শাক-সবজি ও আমন বীজতলা।
গাইবান্ধার সব নদ-নদীতেই কমেছে বন্যার পানি। ফলে বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। নদী তীরবর্তী এলাকার বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা ফিরছে বাড়িতে। তবে, পানি কমলেও বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ এখনো রয়েছে। সরেজমিনে জেলার সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেগেছে নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তা-ঘাট। পানি ওঠা বেশিরভাগ বাড়ি-ঘর ও উঠান থেকে নেমে গেছে বন্যার পানি। তবে, অনেক আঙিনায় কাঁদা দেখা গেছে। ফলে চলাফেরায় ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা।
একই এলাকার হায়দার আলীর স্ত্রী সাহেরা বেগম বলেন, চারদিন থেকে পানি কমতেছে কিন্তু আমার বাড়ি থেকে এখনো পানি নেমে যায়নি। পানিতে থাকতে থাকতে পায়ে ঘাঁ ধরেছে। আমরা গরিব মানুষ কোনো ত্রাণ পায়নি। বন্যার পানি কমলেও হতাশা আর দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার পরিবারগুলো। চরাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক যাদের জীবন-জীবিকা চরম বেকায়দায় পড়েছেন তারা। পানি নেমে গেলেও বন্যার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন দিনমজুর এই পরিবারগুলো। বন্যা কবলিত এসব মানুষের জন্য বরাদ্দ হওয়া ত্রাণও জোটেনি বলে অভিযোগ ছিল এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষের। গোঘাট এলাকার নুরুল ইসলাম ভুট্টু বলেন, গত পাঁচদিন যাবত বন্যার পানির মধ্যে দিন কেটেছে। তবে আজকে আঙিনা থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। বন্যার কারণে ঘরের পিরিলির মাটি খুলে গেছে। তিনি আরও বলেন, বন্যা এসে কর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। আয় নাই অনেক কষ্ট করে দিন যাচ্ছে। পাঁচদিন পানিতে ডুবে থাকলাম কোনো মেম্বার-চেয়ারম্যান খোঁজ নেয়নি। কোনও চাল-ডাল, ত্রাণ পাইনি।
স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠক সাদ্দাম হোসেন পবন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঠিক তালিকা করে তাদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন। এছাড়া কৃষিতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বন্যার কারণে যারা বেকার হয়ে পড়েছে তাদেরকেও বন্যাকালীন সময়ের জন্য সহযোগিতা জরুরি। এজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, চারদিন থেকে পানি কমে বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এখনো চরাঞ্চলের বেশ কিছু বাড়িঘরে পানি রয়েছে। প্রশানের পক্ষ থেকে ৩৬৫ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৯ মে.টন চাল রবাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো তা বিতরণ করা হয়েছে। এনজিওরাও সহযোগিতা করেছে।
গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বার্তা২৪.কমকে জানান, চলমান বন্যায় সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৯টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। গত চারদিন থেকে পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আশা করা যায় আগামী সপ্তাহেই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :