ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস প্রদান, শ্রমিক নিয়োগ, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়াসহ ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ সোমবার সকালে কারখানার শ্রমিক ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এ কর্মসূচি শুরু করেন। এ অবস্থায় আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৩৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আজ সকাল ৯টার দিকে পলাশবাড়ী এলাকায় নবীনগর থেকে চন্দ্রাগামী মহাসড়কের এক পাশে বিক্ষোভ শুরু করেন গিল্ডান বাংলাদেশ নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। এ ছাড়া ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। নরসিংহপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা আবদুল্লাহপুর থেকে বাইপাইলের সড়কে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেন এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে আশুলিয়ার ডিইপিজেড সামনের নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক অবরোধ করে রাখেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গিল্ডান বাংলাদেশের একজন শ্রমিক বলেন, তাঁরা ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের যেন চাকুরিচ্যুত করা না হয়; যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁদের অন্তত ১০ বছরের চাকরির নিশ্চয়তা; হাজিরা বোনাস ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা করতে হবে; প্রমোশনের ক্ষেত্রে চাকরির বয়স কমপক্ষে ৩ বছর ও যোগ্যতা অনুসারে হতে হবে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, গিল্ডান বাংলাদেশ কারখানার সামনের ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে বাংলাদেশে আমাদের (গিল্ডান বাংলাদেশ) সকল কারখানা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’ ওই কারখানার পাশেই পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেডের অবস্থান। ওই প্রতিষ্ঠানের ফটকে আজ কারখানা সবেতন ছুটি থাকবে, এমন নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাসসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। ডিইপিজেডের সামনে চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ করে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ৩৫ থেকে ৪০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে।ঢাকার সাভার ও ধামরাইয়ে পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস প্রদান, শ্রমিক নিয়োগসহ নানা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ রোববার সকালে শ্রমিক ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এই কর্মসূচি শুরু করেন। পরে সেখানকার অন্তত ১৫টি তৈরি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
আজ সকাল ৯টার দিকে সাভারের আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে জিএবি লিমিটেড ও আশেপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। নরসিংহপুর এলাকায় নাসা গ্রুপের শ্রমিকেরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে হা-মীম গ্রুপের কারখানাসহ বেশ কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এসব কারখানার শ্রমিকরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। পরে শিল্পাঞ্চল পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিএবি লিমিটেডের এক শ্রমিক বলেন, কারখানার খাবারের মান ভালো নয়। ওভারটাইম ও হাজিরা বোনাস দেয় না। যখন–তখন শ্রমিক ছাঁটাই করা। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা এ সব বিষয়ে কারখান কর্তৃপক্ষকে সমাধান করতে বলেন। কিন্তু দাবি না মেনে আজ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঠগড়া এলাকার একটি শিল্প গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আমরা পরিস্থিতি লক্ষ্য করছি।’
এদিকে আজ সকাল থেকে ধামরাই উপজেলার ঢুলিভিটা এলাকায় স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ সিভি জমা নেওয়া শুরু করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ছাড়া একমি কনজ্যুমারস লিমিটেডের শ্রমিকেরা এগ্রোভেট ও কনজ্যুমার ফার্মার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা, ফার্মার প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে সব সুযোগ–সুবিধা প্রদান, দৈনিক শ্রমিকদের চাকরির বয়স ছয় মাস হলে তাঁদের ক্যাজুয়েল এবং এক বছর হলে স্থায়ী করাসহ ১৬ দফা দাবি জানিয়ে প্রতিষ্ঠান চত্বরে বিক্ষোভ করেন। আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, আশুলিয়ার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা নানা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। একেক জায়গায় একেক রকম দাবি। কিছু যৌক্তিক দাবি রয়েছে। যেমন হাজিরা বোনাস, টিফিনের টাকা, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা। ধামরাইয়ে স্নোটেক্স কারখানার সামনে চাকরিপ্রত্যাশীরা বিক্ষোভ করেছেন। একমি কনজ্যুমারস লিমিটেডেও বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকেরা। ১০–১৫টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মোহাম্মদ সারোয়ার আলম আরও বলেন, সমস্যা সমাধানে কারখানা মালিকপক্ষকে আরও আন্তরিক হতে হবে। শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :