আন্দোলন নিয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশঃ ওবায়দুল কাদের


প্রকাশের সময় : জুলাই ৯, ২০২৪, ২:৩০ অপরাহ্ন / ১০২
আন্দোলন নিয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশঃ ওবায়দুল কাদের

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে বিএনপির সমর্থনকে ‘দূরভিসন্ধি’ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। এ আন্দোলনে উসকানি দিয়ে সারা দেশে যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে, সে ব্যাপারে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে এ নির্দেশনা দেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটা ব্যাপারে আমাদের সতর্কতা… এটা অবশ্যই রিলেটেড বিষয়; অরাজনৈতিক আন্দোলন, শিক্ষকদের আন্দোলনও অরাজনৈতিক এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও অরাজনৈতিক। এ অরাজনৈতিক আন্দোলনে বিএনপি ও তাদের সমমনাদের রাজনৈতিক সমর্থন নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এই অশুভ মহলটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উসকানি ও ইন্ধন দিয়ে যাতে সারা দেশে বিশৃঙ্খলার আবহ না দিতে পারে, সেজন্য সারা বাংলাদেশে, রাজধানীতে সর্বত্র সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। সেটা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।’

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তারা নিজেরা আন্দোলন করতে পারে না। ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর ভর করেছিল। এবারও তারা নিজেরা আন্দোলনে ব্যর্থ, হেরে যাওয়ার ভয়ে নির্বাচনে যায়নি। এখন যদি কোটা সংস্কার আন্দোলনের উপর করে সরকার হটানোর অভিসন্ধি-দুরভিসন্ধি বাস্তবায়ন করা তাদের লক্ষণ। অশুভ শক্তির ব্যাপারে আমাদের সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে।’ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দুটি আন্দোলন একই সময় চলায় সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করার কথা উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি কোটা সংস্কারের যে আন্দোলন শিক্ষার্থীরা করছে, আজকে তাদের নির্ধারিত কোনও কর্মসূচি নেই। সে জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। এমনও আমরা শুনেছি, তারা উচ্চ আদালতের যে মামলা চলছে তাদের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করেছেন এবং আদালতে যথা সময়ে হাজির হবে। এটাও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। এ জন্য ধন্যবাদ জানাই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে একটা পরিপত্র জারি করে তখন কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এতোদিন সরকারি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সাত সন্তান মামলা করেন কোটার বিষয় নিয়ে। হাইকোর্ট একটা রায় দেয়, এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ থেকে আপিল করা হয়।’ পূর্ণাঙ্গ কোর্টে দ্রুত শুনানি হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আন্দোলনকারীরা কোটা বাতিল নয়, সংস্কার চান মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা নিজেরাই যখন তাদের প্রতিনিধি আইনজীবী কোর্টে প্রতিনিধিত্ব করবে, তাদের কথা কোর্ট শুনবে, সরকার পক্ষের কথাও শুনবে। সব পক্ষের কথা শুনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত নেবে, এটাই আমরা আশা করি। ওই পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার জন্য অনুরোধ করবো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যে যাই করি, জনদুর্ভোগের কারণ যাতে সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের সতর্ক মনোযোগ আকর্ষণ করছি। এ নিয়ে আমাদের কারো কোনও প্রকার উসকানিতে যাবো না। আমাদের কেউ যেন উসকানিতে না যায়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক ও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।’ ছাত্রলীগকে সতর্কভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোনও অবস্থায় উসকানি দেওয়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও নেত্রী নির্দেশ দিয়ে গেছেন, তাদের পক্ষ থেকেও যেন উসকানি না দেওয়া হয়।’চাকারিতে কোটার বিষয়ে আওয়ামী লীগ কি সরকারের পক্ষে, নাকি আদালতের পক্ষে এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সরকার সরকারের পক্ষে, আওয়ামী লীগও সরকারের পক্ষে।’ শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। সেটা খুব বেশি জটিল সমস্যা নয়, সমাধানের অযোগ্য নয়। সেটাও সমাধান অচিরেই হয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসার কথা ছিল, সেটা কবে বসবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসবো আমরা কি বলেছি?’ শিক্ষকরা বলেছেন, সাংবাদিকরা এমন উত্তর দিলে তিনি বলেন, ‘এখন তারা কি বললো, সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় নয়।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদেরও তো অসুবিধার বিষয় থাকতে পারে। আমরা তাদের প্রতি কোনও অসম্মান করছি না। আমরা তাদের আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছি। সময়মতো এর সমাধান হয়ে যাবে, এটাই আমরা আশা করি।’ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছি, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর ও উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।