বরিশালে আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ সদস্যদের খাবারবাহী একটি পিকআপ ও ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার সাথে যুক্ত। আজ শনিবার দুপুরে নগরের হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় কনস্টেবল সিফাত হাসানাত আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা আড়াইটার দিকে নগরের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা সিএন্ডবি রোড হয়ে সদর রোডের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা থেকে সদর রোডে যাওয়ার সময় খাবারবাহী পিকআপ চলে আসে। শিক্ষার্থীদের বাঁধার মুখে যাওয়ার চেষ্টা করে পিকআপ। তখন শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হলে চালক এএসআই ইয়াহিয়া পিকআপ রেখে পালিয়ে যান। তখন শিক্ষার্থীরা পিকআপে থাকা তিন সদস্যর ওপর হামলা করে। অন্যান্য শিক্ষার্থীরাসহ স্থানীয়রা তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে মারকাজ মসজিদে নেয়। শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর তিন সদস্যকে উদ্ধার করা হয়।
এ সময় আরেক দল শিক্ষার্থী চৌমাথা বাজারের বিপরীতে বীরমুক্তিযোদ্ধা সুলতান মৃধা পুলিশ বক্সে ভাঙচুর করেছে। তারা পুলিশের বক্স তছনছ করেছে।
এপিবিএন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খাবারবাহী ওই পিকআপে এএসআই ইয়াহিয়া চালক হিসেবে ছিলেন। এছাড়াও অপর তিন সদস্য হলেন এএসআই নেয়ামত, কনস্টেবল সিফাত হাসানাত ও মো. রিয়াজ। পিকআপে ৬০ জন ফোর্সের খাবার ছিলো।
এপিবিএন-এর এসআই নেয়ামত বলেন, ‘আমরা বিমানবন্দর থেকে ফোর্সের খাবার নিয়ে আসছি। ছাত্ররা আন্দোলন করে ডান পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। আমাদের গাড়ি দেখে কিছু ছাত্ররা হৈ-হুল্লোর শুরু করে। তখন পিকআপের চালক সাইড করে দৌড় দেয়। তখন আমরা আটকা পড়ে যাই। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মসজিদে আশ্রয় দিয়েছে। আমাদের মধ্যে কনস্টেবল সিফাত একটু আহত হয়েছে।’
বিএম কলেজের শিক্ষার্থী সুমন এই ভাঙচুরের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়িত নয় দাবি করে বলেছেন, একটি মহল তাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপদে ফেলতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পুলিশ বক্স ও পিকআপ ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হবে।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধের কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) গাড়ি ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা।
শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে মহাসড়কের হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে ভাঙচুরের ঘটনায় কোন শিক্ষার্থী জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সংগঠক। তাদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দুষ্কৃতিকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এর আগে প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেলা ১১টার দিকে বিএম কলেজের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।
টার্মিনালের সামনে দেড়টা পর্যন্ত অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়কের হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন মহাসড়কে যায় শিক্ষার্থীরা। সেখানে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এ সময় সারাদেশে আন্দোলনে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনার বিচার এবং সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন তারা। এর আগে মহাসড়কের আমতলা মোড় এলাকায় ঘণ্টাখানেক অবরোধ করে শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের (শেবাচিম) শিক্ষার্থীরা। তিন ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধের কারণে দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে যাত্রীদের দুর্ভোগ হয়। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে বাধা দিতে দেখা যায়নি।
বরিশাল নগর পুলিশের কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে কোন বাধা দেইনি। শিক্ষার্থীরা অযথা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। এছাড়া সকালে ঢাকা বরিশাল কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালী এলাকায় শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্টের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আপনার মতামত লিখুন :