সমাজে বিভিন্ন স্তরের মানুষ বসবাস করে। আল্লাহতায়ালা কাউকে ধনী করেন এবং কাউকে গরিব বানান। ধনীদের জন্য উচিত গরিবদের সহযোগিতায় দানের হাত সম্প্রসারিত করা। সমাজের প্রতিটি গরিব শ্রেণির লোকদের প্রতি দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শন করা একটি মহৎ কাজ। কেননা একমাত্র আল্লাহতায়ালাই ধনী এবং সবাই তাঁর সামনে গরিব, অসহায়, মিসকিন এবং প্রতিটি ধনী ব্যক্তি যা কিছু অর্জন করেছেন তাঁর সবকিছুই আল্লাহপাকের দয়া, মেহেরবানি ও দান। সুতরাং আল্লাহপাকের দানে ধনী ব্যক্তি অপর গরিব ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহপাকেরই নির্দেশ। কেননা শুধু আল্লাহপাকই ধনী। বাকি সবাই গরিব। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ বিষয়ের প্রতি বিশেষ তাগিদ রয়েছে। আল্লাহতায়ালা কোরআন কারিমে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি থেকে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দিই তা থেকে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর, (সুরা বাকারা : ২৬৭) দানশীলতার ফজিলতের কথা উল্লেখপূর্বক কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, যারা নিজেদের ধনৈশ্বর্য আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্য বীজ, যা সাতটি শিষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শিষে রয়েছে ১০০ শস্যকণা। আল্লাহপাক যাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ, (সুরা বাকারা : ২৬১) আল্লাহতায়ালা হলেন সবচেয়ে বড় দাতা, তারপর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় দাতা হলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর দানের তুলনা হয় না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দাতা (বুখারি)। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন দানশীলতার মূর্ত প্রতীক। জীবনে কেউ তাঁর কাছে কিছু চেয়েছে এবং জবাবে তিনি না বলেছেন এমনটি কখনো হয়নি। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সব মানুষের তুলনায় সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী, সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা ও সর্বাধিক সাহসী ছিলেন ছিলেন (বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত)। দানশীলতা মানুষকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে এবং জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দানশীলতা জান্নাতের একটি বৃক্ষ এবং যে এর কোনো একটি শাখা ধারণ করবে, তাঁকে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। আর কৃপণতা জাহান্নামের একটি বৃক্ষ। যে এর কোনো একটি ডালপালা ধারণ করবে, তা তাঁকে জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেবে, (বাইহাকি মিশকাত) আল্লাহর দেওয়া শরীর দিয়ে আল্লাহতায়ালার ইবাদত করা ও তাঁর দেওয়া সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে জান্নাত অর্জন করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য, নিজের প্রিয় বস্তু আল্লাহর পথে ব্যয় না করা পর্যন্ত কল্যাণ লাভ করা কখনোই সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, তোমরা যা ভালোবাস তা ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করতে পারবে না (সুরা আল ইমরান : ৯২)। এই আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর হজরত আবু তালহা (রা.) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আমার কাছে বায়রুহা বাগানটি অত্যন্ত প্রিয়, এটি আল্লাহর ওয়াস্তে আমি দান করে দিলাম। এর বিনিময়ে আমি আল্লাহর কাছে পুণ্য ও সঞ্চয় চাই। সুতরাং আল্লাহর নিবেদিত পথে আপনি তা ব্যয় করুন। এ কথা শুনে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ তো অনেক লাভজনক সম্পদ, এ তো অনেক লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বললে আমি তো শুনলাম। তুমি এ সম্পত্তি বর্তমান নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দাও। এটাই আমি ভালো মনে করছি। তখন আবু তালহা (রা.) বললেন হে আল্লাহর রসুল! আমি তাই করব। তারপর আবু তালহা (রা.) তাঁর সম্পত্তি তাঁর চাচাতো ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন (বোখারি)। হজরত আবু দাউদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমাদের সাদাকা করার হুকুম করার পর আমরা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বোঝা বহন করতাম এবং আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অক্লান্ত পরিশ্রম করে কেবল এক মুদ্দ গম বা খেজুর আনতে পারত এবং তাই সাদাকা করত। অথচ এখন আমাদের কারও কারও কাছে এক লাখ পরিমাণ দিরহাম রয়েছে (বুখারি) হজরত ইমাম গাজ্জালি (র.) বলেন, দানকারীগণ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত : এক. ওই সব দানকারীগণ, তাঁরা যা পান তার সব কিছুই আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিয়ে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া ও প্রেমের সত্যতা প্রদর্শন করেন। হজরত আবু বক্কর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর অপূর্ব দানের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। দুই. ওই শ্রেণির লোকজন, যারা নিজেদের খাওয়া পরার পর অতিরিক্ত জমিয়ে না রেখে সর্বদাই দিন দুঃখীর দুঃখ মোচনের জন্য সচেষ্ট থাকেন। যখনই সুযোগ পান তখনই তাঁরা অকাতরে দান করে অভাবগ্রস্তদের সহায়তা করে থাকেন, তাঁরা কেবল জাকাতের নির্ধারিত অংশ দান করেই ক্ষান্ত হন না বরং প্রয়োজনে সবকিছু আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে দেন। কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, লোকেরা আপনাকে জিজ্ঞেস করে কী তাঁরা ব্যয় করবে? আপনি বলে দিন, যা উদ্বৃত্ত সবই। (সুরা বাকারা : ২১৯)
আপনার মতামত লিখুন :