রাস্তার কারণে যে গ্রামের মেয়েদের ‘বিয়ে’ ভেঙে যায়


প্রকাশের সময় : জুলাই ১০, ২০২৪, ৩:২৫ অপরাহ্ন / ১০২
রাস্তার কারণে যে গ্রামের মেয়েদের ‘বিয়ে’ ভেঙে যায়

কখনো শুনেছেন যে রাস্তার কারণে মেয়েদের ‘বিয়ে ভেঙে’ যাচ্ছে! শুনতে অবাক লাগলেও এমন ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লায়।

মূলত  কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার গালিমপুর ও দক্ষিণ শিলমুড়ী ইউনিয়নের ছয় গ্রামের মানুষের যাতায়াতের পথ একটি। আর এখানে সমস্যা হচ্ছে সড়কের সিংহভাগ অংশ দক্ষিণ শীলমুড়ি ইউনিয়নের সীমানায় এবং বাকি অংশ গালিমপুর ইউনিয়নের সীমানায়। আর এক রাস্তার দুই অভিভাবক থাকায় রাস্তাটি মেরামত মেরামত হচ্ছে না বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। সম্প্রতি ওই এলাকার বাসিন্দা আবুল কালামের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়। তবে সেটি পরে ভেঙে যায় শুধুমাত্র রাস্তার বেহাল দশার কারণে। বরপক্ষ রাস্তার বেহাল দশার কারণ দেখিয়ে বিয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। এলাকার মানুষ চেয়ারম্যানদের কাছে বার বার গেছে। কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছে না। আমার মেয়ের মতো অনেকেরই একই অবস্থা।

আসলে ওই রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে কাদাযুক্ত ছোট বড় গর্তে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও সাধারণ পথচারীদের। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটি উপজেলার গালিমপুর ইউনিয়নের ঘোষ্পা গ্রাম থেকে দক্ষিণ শিলমুড়ি ইউনিয়নের শিয়ালোড়া-জয়াগ হয়ে পাশের উত্তর শিলমুড়ি ইউনিয়ন ও একই ইউনিয়নের আলোকদিয়াগ্রাম, গোবিন্দপুর, সুলতানপুরে মিলেছে। প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তার পুরোটাই বেহাল অবস্থা। এই সড়কের পাশেই ঘোষ্পা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিয়ালোড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। একটু বৃষ্টিতেই শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম নষ্ট হয়ে যায়। শিক্ষার্থী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষজনের যাতায়াত এই রাস্তা দিয়ে। এলাকাবাসীসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চান দ্রুত সড়কটি সংস্কার করে এলাকাবাসীকে এ দুর্ভোগ থেকে যেন মুক্তি দেওয়া হয়।

রাবু বেগম নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমি খুব অসুস্থ। হাসপাতালে গেছিলাম। আপনিই বলেন, এই রাস্তা দিয়ে একজন রোগী কিভাবে যাতায়াত করেন?এক পাথচারী বলেন, এই এলাকায় আমার শ্বশুর বাড়ি। তবে আমি বর্ষাকালে শ্বশুর বাড়ি আসতে চাই না। বৃষ্টির দিনে শ্বশুর বাড়িতে আসলে হাতে জুতা আর প্যান্ট উঠাতে হয় হাঁটু সমান। আমার বিয়ের পর ধরেই দেখি এই রাস্তার অবস্থা এমন।অভিযোগ করে এর দোকনি বলেন, আমার এখানে সারের দোকান। একটু বৃষ্টি হলেই বাইরের কোনো ক্রেতা আমার দোকানে আসতে পারে না। এই রাস্তাটি গালিমপুর ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ শীলমুড়ি ইউনিয়নের সংযোগস্থল। দুই ইউনিয়নের মধ্যবর্তী হওয়ার কারণেই এই রাস্তাটির কাজ হচ্ছে না।শিয়ালোড়া গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, এখন আমার মনে হয়, এই এলাকায় জন্ম নেয়া অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এ বিষয়ে গালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান বাচ্চু মিয়া বলেন, আমি চেয়ারম্যান পদে আছি দুই-তিন মাস। আমি নিজে রাস্তাটা দেখতে যাবো। আপনাকে এলাকাবাসী যা বলছে, এটাই সত্য। আসলে আমি নিজেও জানি না ওই রাস্তার কতটুকু আমার ইউনিয়নে পড়ছে। তবে যতটুকু শুনেছি, এ রাস্তাটি উভয় চেয়ারম্যানের সমন্বয় করে সংস্কার করে। এই রাস্তার বেশিরভাগ অংশ পড়েছে দক্ষিণ শীলমুড়ির সীমানায়। যখন রাস্তা সংস্কারের সময় আসবে তখন পুরোটাই আমি করে দেব।দক্ষিণ শীলমুড়ির ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন  বলেন, ওই জায়গাটি ইউনিয়নের একবারে ভেতরে পড়েছে। বড় প্রকল্প এখানে আনা যায় না। তিন বছর চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। শীলমুড়ি থেকে যে রাস্তাটা জয়াগ গ্রামের ভেতর দিয়ে ঢুকছে, সেটা গত ২৩-২৪ অর্থবছরে এক কিলোমিটার পাকা করার বরাদ্দ আসে। ঠিকাদার আধা কিলোমিটার করেই এখান থেকে চলে যায় বড় গাড়ি ঢুকানো যায় না দেখে। এখন যেখানে যেখানে কাজ করা লাগবে গ্রামবাসীকে বলেন আমার কাছে স্থান আর জায়গার নাম লিখে অভিযোগ করতে। সলিংয়ের বরাদ্দ আসলে তখন আমি করে দেব।

এ বিষয় স্থানীয় সংসদ সদস্য এজেডএম শফিউদ্দিন শামীমের দাবি, যেসব সড়ক পাকা করতে হবে এবং যেসব সড়কের উন্নয়ন ও মেরামত দরকার সেগুলোর তালিকা করা হচ্ছে।